জাতীয় সংগীতের ইতিহাস,রচয়িতা,বিতর্ক এবং পরিবর্তন
আজকে আমারা জাতীয় সংগীতের ইতিহাস,এর রচয়িতা কে?, কবে গৃহীত হয় এবং জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কোটা আন্দোলন লাল কাপড়ে মুখ বাধা ছেলেদের ও মেয়েদের প্রোফাইল পিকচার ডাউনলোড
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইতিহাস
ভারত উপমহাদেশে যখন মুসলমানরা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছিলো এতে জাতি হিসেবে তারা পিছিয়ে যাচ্ছিলো। অর্থাৎ তারা শিক্ষা ,চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো তখন ইংরেজরা মুসলমানদের এগিয়ে আনার জন্য বাংলা বিভক্ত করার সিদ্দান্ত নেয়। সেই জন্য ১৯০৫ সালে ইংরেজরা বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করে।
বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার ফলে পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা আলাদা করা হয়।কিন্তু কট্টর হিন্দুত্ববাদী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি সহ্য করতে না পেরে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ”আমার সোনার বাংলা” গানটি রচনা করেন। এই বছরই ৭ সেপ্টেম্বর সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরে গানটি মুদ্রিত হয়।
বিশিষ্ট রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের মতে, ”আমার সোনার বাংলা” এটি ১৯০৫ সালের ২৫ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ সভায় প্রথম গীত হয়েছিলো।
তবে ‘আমার সোনার বাংলা” গানটির সুর চুরি করা হয়েছে শিলাইদহের ডাকপিয়ন গগন হরকরা রচিত আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে গানটির সুর থেকে।
জাতীয় সংগীত এর রচয়িতা কে?
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি একাধারে উপন্যাসিক, সুরকার, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোট গল্পকার, প্রাবন্ধিক, শিল্পী ও কবি ছিলেন। তিনি তার জীবনদশায় ৫২ টি কবিতা গ্রন্থ, ৩৬ টি নাটক, ১৩ টি উপন্যাস এবং ৩৬ টি প্রবন্ধ এবং অসংখ গদ্যে লিখেছেন। তাছাড়াও তিনি ৯৫ টি ছোট গল্প এবং ১৯১৫ টি গান লিখেছেন। ছবি আঁকাতেও তার ছিল দারুন প্রতিভা।তিনি দুই হাজারের বেশি ছবি আঁকেন।
গীতাঞ্জলির জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তাকে বিশ্ব কবি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
আমাদের অনেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরো ইতিহাস সম্পর্কে জানি না। এর মূল কারণ হচ্চে ছোট বেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভালো দিকটা জানানো হয়েছে কিন্তু তার খারাপ দিক সম্পর্কে জানানো হয়নি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন মেধাবী কবি ছিলেন তেমনি তিনি কট্টর হিন্দু পন্থী। তিনি মুসলমানদের দুই চোখে দেখতে পারতেন না। এর প্রমান তার বিভিন্ন লেখায় পাওয়া যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ”বীর গুরু” তে লিখেছেন , দেব- দৈত্ত সকলেই নিজের উপাসনা করিতে চায়, গোরখনাথ রামানন্দ প্রবৃত্তি ধর্ম মতে প্রবর্তকেরা নিজে নিজের একটা পন্থা বাহির করিয়া। গেছেন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করিবার সময় মোহাম্মদ নিজের নাম উচ্চারণ করিতে আদেশ করিয়া গিয়াছেন।
এ ভাবে তিনি মুলমানদের কালেমা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
তিনি এই বইতে আরও লিখেছেন , যবনদের মুখে আল্লাহুআকবার ধ্বনি আসছে আর অন্যদিকে, আর্য যোদ্ধারা হিন্দুস্তান রক্ষা করতে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
এখানে যবন শব্দের অর্থ বর্বর বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানরা হলো বর্বর আর গৌমূত্র খাওয়া হিন্দুরা হলো ভারতের আর্য জাতি।
মনু মোতাহের হোসেন চৌধুরী একবার রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতনে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার লেখায় ইসলাম ও বিশ্বনবী সম্পর্কে কোন কথা লেখা নেই কেন? উত্তরে কবি বলেছিলেন কুরআন পড়তে শুরু করেছিলুম কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারিনি আর তোমাদের রসূলের জীবন চরিত্র ভালো লাগেনি।
এরকম ভাবে রবীন্দ্রনাথ তার শত শত বইতে ইসলাম বিদ্বেষী লেখা লিখে গিয়াছেন।
জাতীয় সংগীত কবে গৃহীত হয়
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্বের পর ”আমার সোনার বাংলা” গানের প্রথম ১০ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। এটি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও জাতীয় পরিচয় এর প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।”আমার সোনার বাংলা”গানের ইতিহাস না জেনেই আমরা এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং স্বাধীনতার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে মানি। এতে বুঝা যায় আমরা হুজুগে বাঙালি।
জাতীয় সংগীত ১০ লাইন
আমার সোনার বাংলা গানটির প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। উক্ত দশ লাইন যে দেওয়া হলো :-
![জাতীয় সংগীত ১০ লাইন](https://bangla-newspaper.net/wp-content/uploads/2024/09/image.png)
জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক
জাতীয় সংগীত নিয়ে যত বিরোধ বহু আগে থেকে চলে আসছে। ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় খন্দকার মোশতাক সরকার। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের লক্ষ্যে সে সময় উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি’ও গঠন করা হয় এবং তাদের একমাসের মধ্যে পরিবর্তিত জাতীয় সংগীত’ বাছাই করে নির্বাচিত জাতীয় সংগীতের নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়।
তখন প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি মোশতাক সরকার। এরপর ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়।
তবে জিয়ার মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে আর কেউ কোনো কথা বলেনি। তবে, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসন আমলে জামায়াত থেকে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের ইসলামি মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকে জাতীয় সংগীত সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কৃতি সচিবের আপত্তির কারণে ওই সময়ও প্রস্তাবটি পাস হয়নি।
৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। এতে আবারও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের জন্য আলোচনা শুরু হয়।
![tanvir mahtab](http://bangla-newspaper.net/wp-content/uploads/2024/10/tanvir-mahtab.jpg)
আমি তানভীর মাহতাব, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার উপর অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেছি। আমি এখন Bangla Newspaper সহ এখন টিভি ও নাগরিক টিভি পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।