ভারতে ১০ মাসে ২৩০০ কৃষকের আত্মহত্যা
ভারতে কৃষকদের আত্মহত্যা নতুন কিছু নয় এটি ভারতের প্রধান সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি বর্তমানে এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের সংবাদপত্র দ্য ডেকন ক্রনিকেলের এক প্রতিবেদন, থেকে জানা যায় যে চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১০ মাসে ভারতের মহারাষ্ট্রে 2 হাজার 336 জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। যা রীতিমত চোখ কপালে ওঠার মতো ব্যাপার।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে প্রতিমাসে গড়ে ২৪০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেন। ফলে প্রতিদিন গড়ে আত্মহত্যা করেন ৭জন কৃষক।
বিধানসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী অনিল পাতিল বলেন, হারামি অমরাবতীতে সর্বোচ্চ কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ৯৫১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং প্রায়ত কৃষকদের পরিবারে এক লক্ষ ভারতীয় রুপি ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে ভারত সরকার। এর আশপাশের অঞ্চলেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সাবাজিনগর বিভাগে প্রায় সাত ৮৭৭ কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং মহারাষ্ট্রের নাসিকে ২৫৪টি এবং মহারাষ্ট্রের পুনেতে ২৭ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
কৃষকদের আত্মহত্যার কারণ
কৃষকদের মৃত্যুর কারণ বলতে গিয়ে বিরোধী দলের নেতা বিজয় ওয়াদ্দাতহিয়া সরকারকে দোষারোপ করেন।তার মতে কৃষকদের প্রতি মহারাষ্ট্র সরকারের উদাসীনতার কারণে এমন ঘটনা বার বার ঘটছে। তিনি আরো বলেন গত দুই বছরে তিন হাজারেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এর পিছনে মূল কারণ অনাবাদ ও ঋণের বোঝা। প্রতিবছর অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির ফলে কৃষকেরা আশানুরূপ ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। এতে তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ছেননা। সরকারের কাছে কোন রূপ সাহায্য না পাওয়ার ফলে ঋণের বোঝায় তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তিনি মোদি সরকারের সমালোচনা করে আরো বলে মোদি সরকার কৃষকদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন , তিনি সেগুলো কোন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আমি সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি কৃষকদের সম্পূর্ণ ঋণ মওকুফ করা হয়।
২০২০ সালে মোদি সরকার কৃষকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হওয়া তো দূরের কথা তারা এক মুঠো ভাতের জন্য প্রচুর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ এগুলো সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
ভারতে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান
২০২১ সালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ভারতে প্রতিদিন ১৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করেন যার মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি
মোদি সরকারের পরিসংখ্যান হতে জানা যায় ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ১০ হাজার ৮৮১ জন কৃষক। এই হিসাবে প্রতিদিন ৩০ জন করে ভারতে কৃষক আত্মহত্যা করে। বছরের হিসাব করলে দাঁড়ায় ৫৩১৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করেন এবং মজুরের আত্মহত্যার সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬৩ জন যা খুবই আতঙ্ক জনক।
আত্মহত্যার কারণ মাঠ পর্যায়ে জানতে গিয়ে জানা যায় যে কৃষকেরা অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির ফলে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় সচরাচর পরিবারকে বাঁচাতে নিজে আত্মহত্যা পথ বেছে নেন গত কয়েক বছর ধরে ভারতে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আশানুরূপ কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না যার ফলে তারা তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না ঋণ সম্পর্কে আরো জানা যায় যে তাদের দিনের বোঝা ১০ হাজার থেকে 15 হাজারের মধ্যে এটাও তারা পরিশোধ করতে পারছেন না এ থেকে বোঝা যায় যে তারা কতটা হতাশায় ভুগছেন মাঠ পর্যায়ে আরও জানা যায় বেশিরভাগ কৃষক এর বয়স ত্রিশের নিচে অর্থাৎ বেশিরভাগ যুবক কৃষকরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে ভারতে আত্মহত্যা করা কৃষকদের বয়সের হিসাব করতে গিয়ে আরো জানা যায় যে আত্মহত্যা করা কৃষকদের ২৫ শতাংশের বয়স ত্রিশের নিচে। ৩৫ শতাংশ কৃষকের বয়স ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এবং ক্ষুদ্র সংখ্যক রয়েছেন যাদের বয়স পঞ্চাশের উপরে।
আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আরো জানা যায় যে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি এবং খরা বিভিন্ন জাতীয় দুর্যোগের কারণে কৃষকদের প্রচুর পরিমাণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয় বেশিরভাগ কৃষকরায় মূলত ঋণ নিয়ে ফসলের চাষ করেন ফসল বিক্রি করে তারা এই ঋণ শোধ করেন কিন্তু ফসল না হলে তাদের এই ঋণের বোঝা নিয়ে থাকতে হয় ফলে কোন সমাধান না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন
এই মুহূর্তে মোদি সরকারের উচিত কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়ানো এবং তাদের বিভিন্নভাবে নিরাপত্তা দেওয়া। তারা যেন ঋণের বোঝায় আত্মহত্যা না করে তার ব্যবস্থা নেওয়া। অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে তাদের ফসল নষ্ট না হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া।ঋণদাতারা যেন কৃষকদের উপর চাপ কোনরকম চাপ প্রয়োগ না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদেরকে বিভিন্ন ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করা
উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ আরো বাড়তে পারে
![tanvir mahtab](http://bangla-newspaper.net/wp-content/uploads/2024/10/tanvir-mahtab.jpg)
আমি তানভীর মাহতাব, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার উপর অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেছি। আমি এখন Bangla Newspaper সহ এখন টিভি ও নাগরিক টিভি পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।